সোনালী ব্যাংক এবং একজন পরিচালক।
Share

সোনালী ব্যাংক লুটের পর সেই ব্যাংকের এক পরিচালক বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসে একটি টকশোতে অংশগ্রহণ করে হলমার্ক কেলেঙ্কারি থেকে নিজেকে বাঁচাতে নিজের পক্ষে সাফাই গান। হলমার্ক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় এই লোকটি তখন বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন।
এই লোকটির কথা বলার ভঙ্গি দেখলেই আমার মেজাজ আগে থেকেই খারাপ হয়ে যেত। যদি কোন টকশোতে তাঁকে দেখতাম চ্যানেল পাল্টে দিতাম। কিন্তু সেদিন খুব আগ্রহ সহকারে হলমার্ক ঘটনার বিস্তারিত জানতে অনুষ্ঠানটি দেখতে বসি।
অনুষ্ঠান শেষে যা বুঝলাম তা হচ্ছে, ‘ঘোড়ার ডিম’। ভদ্রলোক শুধু নিজের পক্ষে বার বার একটি কথাই বললেন, “আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত নই। আমি কিছু জানি না। কারা করেছে সেটাও আমি জানি না। আমি বিদেশে ছিলাম।” (ঘটনা যখন ফাঁস হয় তখন তিনি বিদেশে ছিলেন ঠিকই কিন্তু টাকা যখন আত্মসাৎ হয় তখন কিন্তু তিনি দেশেই ছিলেন)
টকশোতে তাঁর বলা কথাগুলো শুনে মেজাজ আরও খারাপ হল। টকশো শেষ হতেই তাঁর মোবাইলে একটা এসএমএস পাঠালাম। লিখলাম, “দাদা, দারুণ বলেছেন।”
পাঁচ মিনিট পরই আমার মোবাইলে ভদ্রলোকের ফোন আসলো। আমি অবাক হলাম তাঁর কল দেখে। কারণ আমি ভদ্রলোককে চিনলেও ভদ্রলোক আমাকে চিনতেন না। তাঁর মোবাইলে আমার নম্বর থাকার কথাও নয়।
ফোন করেই কোন পরিচয় পর্ব ছাড়া শুধুমাত্র কেমন আছেন/ ভাল আছি সেরেই তিনি গর্বের সাথে টকশোতে বলা কথাগুলোই আমাকে বলতে লাগলেন।
আমি বললাম, “ঠিক দাদা। আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কিছু জানেন না। আপনি জড়িতও নন। তবে যারা জড়িত তাদের নামগুলো বলে দিন।কারণ একজন পরিচালক হিসেবে আপনার এই কথা জানার কথা”।
তিনি বার বার আমাকে একই কথা বলতে লাগলেন, “আমি এই অর্থ কেলেঙ্কারীর বিষয়ে কিছুই জানি না।আমি এগুলোর সাথে জড়িত নই।”
আর আমি তাঁকে বার বার একই কথা বলতে লাগলাম,”যারা জড়িত তাদের নাম আপনি বলে দিন”।
ততক্ষণে হয়তো ভদ্রলোক বুঝে ফেলেছিলেন তিনি আমাকে ফোনটা দিয়ে ভুলই করে ফেলেছেন। =D
তিনি তাঁর কথা থেকে সরছেন না। আমিও আমার কথা থেকে। এভাবেই কয়েক মিনিট কথা বলার পর তিনি ফোন রেখে বাঁচার চেষ্টা করলেন।
___________
বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংকের ভাণ্ডার আজ খালি হয়ে গিয়েছে শুধুমাত্র অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে। ভান্ডার খালি করার কাজে কারা কারা জড়িত তা আমরা জানি না। কলকাঠি যারা নাড়েন তাঁরা পেছনেই থাকেন। তাদের মুখোশ কখনো উন্মেচিত হয় না। ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনা যখন সামনে এলো তখন বর্তমান ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থার বিষয়টাও সামনে আসা জরুরী। এবং দেশ থেকে বিগত সময়ে যেই টাকা পাচার হয়েছে তাঁর হিসেব নেওয়াও জরুরী।
আমাদের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা খালি কলসি মত। এই দুরাবস্থার দায় শুধুমাত্র আতিউর রহমানের একার হতে পারে না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনিও এই দায় এড়াতে পারে না। আপনার সময়ে শেয়ার বাজার, বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংককে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। দয়াকরে পদত্যাগ করে জায়গা খালি করুন। বয়স অনেক হয়েছে এবার একটু বিশ্রাম নিন।